Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

ভাদ্র মাসের কৃষিভাদ্র মাসের কৃষি

(১৬ আগস্ট-১৫ সেপ্টেম্বর)

কৃষিবিদ ফেরদৌসী বেগম
সুপ্রিয় কৃষিজীবী ভাইবোন, নীল আকাশে সাদা মেঘ ও কাশফুলের ঋতু শরতের শুভেচ্ছা। এ সময় বর্ষার পানিতে সারাদেশ টইটুম্বুর থাকে, সাথে ঝরে অঝোর বৃষ্টি। সেজন্য            কৃষিতে ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে অনেক বেশি। করোনা পরিস্থিতিতে ও খাদ্য সংকট মোকাবেলায় কৃষির এ ক্ষতি মোকাবেলায় আমাদের নিতে হবে বিশেষ ব্যবস্থাপনা। কৃষির ক্ষতিটাকে পুষিয়ে নেয়া এবং প্রয়োজনীয় কাজগুলো যথাযথভাবে শেষ করার জন্য ভাদ্র মাসে         কৃষিতে করণীয় বিষয়গুলো জেনে নেবো সংক্ষিপ্তভাবে ।
আমন ধান
আমন ধান ক্ষেতের অন্তর্বর্তীকালীন যতœ নিতে হবে। ক্ষেতে আগাছা জন্মালে তা পরিষ্কার করে ইউরিয়া সার উপরিপ্রয়োগ করতে হবে। আমন ধানের জন্য প্রতি একর জমিতে ৮০ কেজি ইউরিয়া সার প্রয়োজন হয়। এ সার তিনভাগ করে প্রথম ভাগ চারা লাগানোর ১৫-২০ দিন পর, দ্বিতীয় ভাগ ৩০-৪০ দিন পর এবং তৃতীয় ভাগ ৫০-৬০ দিন পর প্রয়োগ করতে হবে। নিচু জমি থেকে পানি নেমে গেলে এসব জমিতে এখনো আমন ধান রোপণ করা যাবে। দেরিতে রোপণের জন্য বিআর ২২, বিআর ২৩, ব্রি ধান৪৬, বিনাশাইল, নাইজারশাইল বা স্থানীয় উন্নত ধান বেশ উপযোগী। দেরিতে চারা রোপণের ক্ষেত্রে প্রতি গুছিতে ৫-৭টি চারা দিয়ে ঘন করে রোপণ করতে হবে। আমন মৌসুমে মাজরা, পামরি, চুঙ্গী, গলমাছি পোকার আক্রমণ হতে পারে। এছাড়া খোলপড়া, পাতায় দাগ পরা রোগ দেখা দিতে পারে। এক্ষেত্রে নিয়মিত জমি পরিদর্শন করে, জমিতে খুঁটি দিয়ে, আলোর ফাঁদ পেতে, হাতজাল দিয়ে পোকা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তাছাড়া সঠিক বালাইনাশক সঠিক মাত্রায়, সঠিক নিয়মে, সঠিক সময় শেষ কৌশল হিসাবে ব্যবহার করতে হবে।
পাট
বন্যায় তোষা পাটের বেশ ক্ষতি হয়। এতে ফলনের সাথে সাথে বীজ উৎপাদনেও সমস্যা সৃষ্টি হয়। বীজ উৎপাদনের জন্য ভাদ্রের শেষ পর্যন্ত দেশি পাট এবং আশ্বিনের মাঝামাঝি পর্যন্ত তোষা পাটের বীজ বোনা যায়। বন্যার পানি উঠে না এমন সুনিষ্কাশিত উঁচু জমিতে জো বুঝে  লাইনে বুনলে প্রতি শতাংশে ১০ গ্রাম আর ছিটিয়ে বুনলে ১৬ গ্রাম বীজের প্রয়োজন হয়। জমি তৈরির সময় শেষ চাষে শতকপ্রতি ২৭০ গ্রাম ইউরিয়া, ৪০০ গ্রাম টিএসপি, ১৬০ গ্রাম এমওপি সার দিতে হবে। পরবর্তীতে শতাংশপ্রতি ইউরিয়া ২৭০ গ্রাম করে দুই কিস্তিতে বীজ বপনের ২০-২৫ দিন এবং             ৪০-৪৫ দিন পর জমিতে দিতে হবে।
আখ
এসময় আখ ফসলে লালপচা রোগ দেখা দিতে পারে। লালপচা রোগের আক্রমণ হলে আখের কাÐ পচে যায় এবং হলদে হয়ে শুকিয়ে যেতে থাকে। এজন্য আক্রান্ত আখ তুলে পুড়িয়ে ফেলতে হবে এবং জমিতে যাতে পানি না জমে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। এছাড়া রোগমুক্ত বীজ বা শোধন করা বীজ ব্যবহার করলে অথবা রোগ প্রতিরোধী জাত চাষ করলে লালপচা রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। লালপচা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন কয়েকটি আখের জাত হচ্ছে ঈশ্বরদী ১৬, ঈশ্বরদী ২০, ঈশ্বরদী ৩০।
তুলা
ভাদ্র মাসের প্রথম দিকেই তুলার বীজ বপন কাজ শেষ করতে হবে। বৃষ্টির ফাঁকে জমির জো অবস্থা বুঝে ৩-৪টি চাষ ও মই দিয়ে জমি তৈরি করে বিঘা প্রতি প্রায় ২ কেজি তুলা বীজ বপন করতে হয়। লাইন থেকে লাইনের দূরত্ব ৬০ থেকে ৯০   সেন্টিমিটার এবং বীজ থেকে বীজের দূরত্ব ৩০ থেকে ৪৫              সেন্টিমিটার বজায় রাখতে হয়। তুলার বীজ বপনের সময় খুব সীমিত। হাতে সময় না থাকলে জমি চাষ না দিয়ে নিড়ানি বা আগাছা নাশক প্রয়োগ করে ডিবলিং পদ্ধতিতে বীজ বপন করা যায়। বীজ গজানোর পর কোদাল দিয়ে সারির মাঝখানের মাটি আলগা করে দিতে হবে। সমতল এলাকার জন্য সিবি-৯, সিবি-১২, হীরা হাইব্রিড রূপালী-১, ডিএম-২, ডিএম-৩ অথবা শুভ্র জাতের চাষ করতে পারেন। এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে পাহাড়ি তুলা-১ এবং পাহাড়ি তুলা-২ নামে উচ্চফলনশীল জাতের তুলা চাষ করতে পারেন।
শাকসবজি
ভাদ্র মাসে লাউ ও শিমের বীজ বপন করা যায়। এজন্য ৪-৫ মিটার দূরে দূরে ৭৫ সেমি. চওড়া এবং ৬০ সে.মি গভীর করে মাদা বা গর্ত তৈরি করতে হবে। এরপর প্রতি মাদায় ২০ কেজি গোবর, ২০০ গ্রাম টিএসপি এবং ৭৫ গ্রাম এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে। মাদা তৈরি হলে প্রতি মাদায় ৪-৫টি বীজ বুনে দিতে হবে এবং চারা গজানোর            ২-৩ সপ্তাহ পর দুই-তিন কিস্তিতে ২৫০ গ্রাম ইউরিয়া ও ৭৫ গ্রাম এমওপি সার উপরিপ্রয়োগ করতে হবে। এ সময় আগাম শীতকালীন সবজি চারা উৎপাদনের কাজ শুরু করা যেতে পারে। সবজি চারা উৎপাদনের জন্য উঁচু এবং আলো বাতাস লাগে এমন জায়গা নির্বাচন করতে হবে। এক মিটার চওড়া এবং জমির দৈর্ঘ্য অনুসারে লম্বাকরে বীজতলা করে সেখানে উন্নতমানের ও উন্নতজাতের উচ্চফলনশীল ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন, টমেটো এসবের বীজ বুনতে পারেন। বীজতলার মাটি অবশ্যই শুকনো হতে হবে। অন্যথায় গোড়া ও মূল পচা রোগে সব চারা পচে যেতে পারে।
গাছপালা
ভাদ্র মাসেও ফলদবৃক্ষ এবং ঔষধি গাছের চারা রোপণ করা যায়। বন্যায় বা বৃষ্টিতে মৌসুমের রোপিত চারা নষ্ট হয়ে থাকলে সেখানে নতুন চারা লাগিয়ে শূন্যস্থানগুলো পূরণ করতে হবে। এছাড়া এবছর রোপণ করা চারার গোড়ায় মাটি দেয়া, চারার অতিরিক্ত এবং রোগাক্রান্ত ডাল ছেঁটে দেয়া, বেড়া ও খুঁটি দেয়া, মরা চারা তুলে নতুন চারা রোপণসহ অন্যান্য পরিচর্যা করতে হবে। ভাদ্র মাসে আম, কাঠাল, লিচু গাছ ছেঁটে দিতে হয়। ফলের বোঁটা, গাছের ছোট ডালপালা, রোগাক্রান্ত অংশ ছেঁটে দিলে পরের বছর বেশি করে ফল ধরে এবং ফলগাছে রোগও কম হয়।
প্রাণিসম্পদ
ভাদ্র মাসের গরমে পোলট্রি শেডে পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা করতে হবে। টিনশেডে চটের ছালা রেখে মাঝে মাঝে পানি দ্বারা ভিজিয়ে দিতে হবে। যাতে করে অধিক গরমে মুরগিগুলো মারা না যায় এবং নানা রোগের বিস্তার না ঘটে। ভেজা আবহাওয়া ও মাঝে মাঝে গরম পোলট্রির ক্ষেত্রে গামবোরো রোগের সংক্রমণ বৃদ্ধি করে। এ রোগে  মুরগির পালক নিচের দিকে ঝুলে পড়ে। গা গরম ও কাঁপুনি দেখা দেয়। সাদা পানির মতো পাতলা পায়খানা দেখা যায়। মুরগি সহজে নড়ে না। এমনিতে ভাইরাসজনিত এ রোগের কোন চিকিৎসা নেই। এজন্য আগে থেকেই সতর্ক থাকতে হবে ও রোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিতে হবে।
এ মাসে হাঁস-মুরগির বাচ্চা ফুটানো যেতে পারে। এ মাসে ফুটানো মোরগ-মুরগির বাচ্চার ককসিডিয়া রোগ হতে পারে এদের চিকিৎসা করাতে হবে।
বাংলাদেশে গোখাদ্যের সমস্যা এখনও বিরাজমান। সে কারণে পতিত জমিতে নেপিয়ার, বাজরা, খেসারি, মটর, ইপিল ইপিল, গিনি ঘাস লাগানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। যারা দুধবতী গাভী পালন এবং যারা গরু মোটাতাজাকরণ করবেন, তাদের অবশ্যই গবাদিপশুকে সুষম খাবার সরবরাহ করতে হবে। কোন জায়গায় যদি পানি জমে থাকে সে এলাকায় জন্মানো ঘাস গবাদিপশুকে খাওয়ানো যাবে না। কারণ এতে গাভী বা গরুর রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বেশি। গরু ও ছাগলকে নিয়মিত গোসল করার ব্যবস্থা করতে হবে। গোয়াল ঘরের গোবর নিয়মিত পরিষ্কার করা দরকার। আর গরুর গায়ের আঠালি, মাছি, জোঁক পোকামাকড় বেছে দিতে হবে। তড়কা, বাদলা, গলাফুলা রোগ যাতে না হয় সেজন্য উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বা ভেটেরিনারি সার্জনের সাথে যোগাযোগ রাখতে হবে।
মৎস্যসম্পদ
পুকুরে সার ব্যবহারের মাত্রা আস্তে আস্তে কমিয়ে ফেলতে হবে। জৈবসার ব্যবহার না করাই ভালো। খাদ্য ঘাটতির জন্য পরিমাণ মতো অজৈব সার ব্যবহার করা দরকার। পুকুরে পর্যাপ্ত আলো বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা করে দিতে হবে।
পুকুরে নতুন মাছ ছাড়ার সময় এখন। মাছ ছাড়ার আগে পুকুরের জলজ আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। পুকুর জীবাণুমুক্ত করে সঠিক সংখ্যক সুস্থ সবল পোনা মজুদ করতে হবে। যেসব পুকুরে মাছ আছে সেসব পুকুরে জাল টেনে মাছের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা দরকার। মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভাবিত প্রযুক্তি-পুকুরে পাঙ্গাশ মাছের চাষ, ধান ক্ষেতে মাছ চাষ, প্লাবিত এলাকায় ঘেরের মাধ্যমে রাজপুঁটি ও চিংড়ির চাষ, পুকুরে রুই জাতীয় ও চিংড়ির মিশ্র চাষ এবং প্লাবিত এলাকায় খাঁচায় মাছ চাষ করা যেতে পারে। বন্যার কারণে ভেসে যাওয়া পুকুরের মাছ পুকুরে রাখতে ভেসে যাওয়া পুকুরগুলোর ১৫ থেকে ২০ মিটার দূরত্বে একটি চটের ব্যাগে ৫ থেকে ৭ কেজি ধানের কুড়া বা গমের ভুসি ৫০ থেকে ৬০           সেন্টিমিটার পানির নিচে একটি খুঁটির সাথে বেঁধে দিতে হবে। তবে ব্যাগটিতে অবশ্যই ছোট ছোট ছিদ্র করে দিতে হবে। খাবার পেয়ে মাছ পুকুরেই অবস্থান করবে। কোন কারণে পুকুরের পানি যদি দূষিত হয় তবে ভাইরাস, ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়ার প্রভাবে মাছের ক্ষত রোগ দেখা দিতে পারে। প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে দেহের ভারসাম্যহীনতা, শরীরে লাল দাগ দেখা যায়। পরে মাছ ক্ষতরোগে মারা যায়। এ রোগ প্রতিকারে অধিক আক্রান্ত মাছ উঠিয়ে মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে। প্রতি শতক পুকরে ১ কেজি চুন ও ১ কেজি লবণ প্রয়োগ করতে হবে। ছোট ও ব্রæড মাছের জন্য প্রতি কেজি খাদ্যের সাথে ৬০ থেকে ১০০ মিলি গ্রাম টেরামাইসিন মিশিয়ে মাছকে খাওয়ানো যেতে পারে।
সুপ্রিয় কৃষিজীবী ভাইবোন, বৃষ্টিভেজা প্রকৃতি এখন সবুজ শ্যামলিমায় ভরপুর। সে সাথে পরিবর্তিত জলবায়ু ফলে বন্যা, প্লাবন, বৈশ্বিক করোনাও আমাদের নিত্য সহচর। তাই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে সবসময়। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা আমাদের কৃষিকে নিয়ে যাবে সাফল্যের দারপ্রান্তে। সবার জন্য নিশ্চিত সফল কৃষি উৎপাদন কামনা করে এ মাসের কৃষি এখানেই শেষ করলাম। য়

সম্পাদক, কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ঢাকা, টেলিফোন:০২৫৫০২৮৪০৪, ই-মেইল : editor@ais.gov.bd

 

ভাদ্র মাসের কৃষি

সুপ্রিয় কৃষিজীবী ভাইবোন, আপনাদের সবার জন্য শুভকামনা। কৃষির এ ক্ষতি মোকাবিলায় আমাদের নিতে হবে বর্ষায় বিশেষ ব্যবস্থাপনা। কৃষির ক্ষতিকে পুষিয়ে নেয়া এবং প্রয়োজনীয় কাজগুলো যথাযথভাবে শেষ করার জন্য ভাদ্র মাসে কৃষিতে করণীয় বিষয়গুলো সংক্ষিপ্তভাবে জেনে নেব-

 

আমন ধান
এ সময় আমন ধান ক্ষেতের অন্তর্বর্তীকালীন যত্ন নিতে হবে। ক্ষেতে আগাছা জন্মালে তা পরিষ্কার করতে হবে। আগাছা পরিষ্কার করার পর ইউরিয়া সার উপরিপ্রয়োগ করতে হবে। আমন ধানের জন্য প্রতি হেক্টর জমিতে ২০০ কেজি ইউরিয়া সার প্রয়োজন হয়। এ সার তিন ভাগ করে প্রথম ভাগ চারা লাগানোর ১৫ থেকে ২০ দিন পর, দ্বিতীয় ভাগ ৩০ থেকে ৪০ দিন পর এবং তৃতীয় ভাগ ৫০ থেকে ৬০ দিন পর প্রয়োগ করতে হবে। নিচু জমি থেকে পানি নামতে দেরি হয়। পানি নেমে গেলে এসব জমিতে এখনও আমন ধান রোপণ করা যাবে। দেরিতে রোপণের জন্য বিআর ২২, বিআর ২৩, বিনাশাইল, নাইজারশাইল বা স্থানীয় উন্নত ধান বেশ উপযোগী। এ ক্ষেত্রে প্রতি হেক্টর জমিতে ১৭৫ কেজি ইউরিয়া, ১৩০ কেজি টিএসপি এবং ৬০ কেজি এমওপি সার প্রয়োজন। ইউরিয়া ছাড়া অন্য দুটি সার জমি তৈরি করার সময় প্রয়োগ করতে হবে। দেরিতে চারা রোপণের ক্ষেত্রে প্রতি গুছিতে ৫ থেকে ৭টি চারা দিয়ে ঘন করে রোপণ করতে হবে।

 

আমন মৌসুমে মাজরা, পামরি, চুঙ্গি, গলমাছি পোকার আক্রমণ হতে পারে। এছাড়া খোলপড়া, পাতায় দাগ পড়া রোগ দেখা দিতে পারে। এক্ষেত্রে  নিয়মিত জমি পরিদর্শন করে, জমিতে খুঁটি দিয়ে, আলোর ফাঁদ পেতে, হাতজাল দিয়ে পোকা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তাছাড়া সঠিক বালাইনাশক সঠিক মাত্রায়, সঠিক নিয়মে, সঠিক সময় শেষ কৌশল হিসাবে ব্যবহার করতে হবে।

 

পাট
বন্যায় তোষা পাটের বেশ ক্ষতি হয়। এতে ফলন যেমন কমে তেমনি বীজ উৎপাদনেরও সমস্যা সৃষ্টি হয়। এতে পরবর্তী মৌসুমে বীজ সঙ্কট দেখা দেয়। এ সমস্যা সমাধানে বিশেষ যত্নে ভাদ্রের শেষ পর্যন্ত দেশি পাট এবং আশ্বিনের মাঝামাঝি পর্যন্ত তোষা পাটের বীজ বোনা যায়। বন্যার পানি উঠে না এমন সুনিষ্কাশিত উঁচু জমিতে জো বুঝে প্রতি শতাংশে লাইনে বুনলে ১০ গ্রাম আর ছিটিয়ে বুনলে ১৬ গ্রাম বীজের প্রয়োজন হয়। জমি তৈরির সময় শেষ চাষে শতক প্রতি ৩০০ গ্রাম ইউরিয়া, ৬৫০ গ্রাম টিএসপি, ৮০ গ্রাম এমওপি সার দিতে হবে। পরে শতাংশপ্রতি ইউরিয়া ৩০০ গ্রাম করে দুই কিস্তিতে বীজ গজানোর ১৫ থেকে ২০ দিন পরপর জমিতে দিতে হবে।

 

আখ
এ সময় আখ ফসলে লালপচা রোগ দেখা দিতে পারে। এক ধরনের ছত্রাকের আক্রমণে এ রোগ হয়। লালপচা রোগের আক্রমণ হলে আখের কাণ্ড পচে যায় এবং হলদে হয়ে শুকিয়ে যেতে থাকে। এজন্য আক্রান্ত আখ তুলে পুড়িয়ে ফেলতে হবে এবং জমিতে যাতে পানি না জমে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। এছাড়া রোগমুক্ত বীজ বা শোধন করা বীজ ব্যবহার করলে অথবা রোগ প্রতিরোধী জাত চাষ করলে লালপচা রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

 

তুলা
 ভাদ্র মাসের প্রথম দিকেই তুলার বীজ বপন কাজ শেষ করতে হবে। বৃষ্টির ফাঁকে জমির জো অবস্থা বুঝে ৩ থেকে ৪টি চাষ ও মই দিয়ে জমি তৈরি করে বিঘা প্রতি প্রায় ২ কেজি তুলা বীজ বপন করতে হয়। লাইন থেকে লাইনের দূরত্ব ৬০ থেকে ৯০ সেন্টিমিটার এবং বীজ থেকে বীজের দূরত্ব ৩০ থেকে ৪৫ সেন্টিমিটার বজায় রাখতে হয়। তুলার বীজ বপনের সময় খুব সীমিত। তাই হাতে সময় না থাকলে জমি চাষ না দিয়ে নিড়ানি বা আগাছানাশক প্রয়োগ করে জমি আগাছামুক্ত করে ডিবলিং পদ্ধতিতে বীজ বপন করা যায়। বীজ গজানোর পর কোদাল দিয়ে সারির মাঝখানের মাটি আলগা করে দিতে হবে। সমতল এলাকার জন্য সিবি-৯, সিবি-১২, হীরা হাইব্রিড রূপালী-১, ডিএম-২, ডিএম-৩ অথবা শুভ্র জাতের চাষ করতে পারেন। এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে পাহাড়ি তুলা-১ এবং পাহাড়ি তুলা-২ নামে উচ্চফলনশীল জাতের তুলা চাষ করতে পারেন।

 

শাকসবজি
ভাদ্র মাসে লাউ ও শিমের বীজ বপন করা যায়। এজন্য ৪ থেকে ৫ মিটার দূরে দূরে ৭৫ সেমি. চওড়া এবং ৬০ সেমি. গভীর করে মাদা বা গর্ত তৈরি করতে হবে। এরপর প্রতি মাদায় ২০ কেজি গোবর, ২০০ গ্রাম টিএসপি এবং ৭৫ গ্রাম এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে। মাদা তৈরি হলে প্রতি মাদায় ৪ থেকে ৫টি বীজ বুনে দিতে হবে এবং চারা গজানোর ২ থেকে ৩ সপ্তাহ পর দুই-তিন কিস্তিতে ২৫০ গ্রাম ইউরিয়া ও ৭৫ গ্রাম এমওপি সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে।


এ সময় আগাম শীতকালীন সবজি চারা উৎপাদনের কাজ শুরু করা যায়। সবজি চারা উৎপাদনের জন্য উঁচু এবং আলো বাতাস লাগে এমন জায়গা নির্বাচন করতে হবে। জমি ভালোভাবে কুপিয়ে বা চাষ দিয়ে মাটি ঝুর ঝুরে করতে হবে। চাষের সময় ১ বর্গমিটার জমির জন্য ১০ কেজি জৈবসার এবং ৩০০ গ্রাম টিএসপি মাটির সঙ্গে ভালো করে মিশিয়ে দিতে হবে। জমি তৈরি হয়ে গেলে এক মিটার চওড়া এবং জমির দৈর্ঘ্য অনুসারে লম্বা করে বেড তৈরি করতে হবে। দুই বেডের মাঝখানে ৬০ সেমি. ফাঁকা রাখতে হবে। এতে যে নালা তৈরি হবে তার গভীরতা হবে ১৫ সেমি.। বীজতলা হয়ে গেলে সেখানে উন্নত জাতের ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন, টমেটো এসবের বীজ বুনতে পারেন।


গাছপালা
ভাদ্র মাসেও ফলদ বৃক্ষ এবং ঔষধি গাছের চারা রোপণ করা যায়। বন্যায় বা বৃষ্টিতে মৌসুমের রোপিত চারা নষ্ট হয়ে থাকলে সেখানে নতুন চারা লাগিয়ে শূন্যস্থানগুলো পূরণ করতে হবে। এছাড়া এ বছর রোপণ করা চারার গোড়ায় মাটি দেয়া, চারার অতিরিক্ত এবং রোগাক্রান্ত ডাল ছেঁটে দেয়া, বেড়া ও খুঁটি দেয়া, মরা চারা তুলে নতুন চারা রোপণসহ অন্যান্য পরিচর্যা করতে হবে। ভাদ্র মাসে আম, কাঁঠাল, লিচু গাছ ছেঁটে দিতে হয়। ফলের বোঁটা, গাছের ছোট ডালপালা, রোগাক্রান্ত অংশ ছেঁটে দিলে পরের বছর বেশি করে ফল ধরে এবং ফল গাছে রোগও কম হয়।


প্রাণিসম্পদ
পোলট্রি শেডে পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা করতে হবে। আর টিন শেডে চটের ছালা রেখে মাঝে মাঝে পানি দ্বারা ভিজিয়ে দিতে হবে। ভেজা আবহাওয়া ও মাঝে মাঝে গরম পোলট্রি ক্ষেত্রে গামবোরো রোগের সংক্রমণ বৃদ্ধি করে। এ রোগে মুরগির পালক নিচের দিকে ঝুলে পড়ে। গা গরম ও কাঁপুনি দেখা দেয়। সাদা পানির মতো পাতলা পায়খানা দেখা যায়। মুরগি সহজে নড়ে না। এমনিতে ভাইরাসজনিত এ রোগের কোনো চিকিৎসা নেই। তবে আছে সতর্কতা ও রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা। প্রতিরোধ ব্যবস্থাগুলো হলো- খামার জীবাণুমুক্তকরণ, ভ্যাকসিন প্রয়োগ, বায়োসিকিউরিটি এসব। বায়োসিকিউরিটির জন্য খামারকর্মীদের জীবাণুমুক্ত জুতা ও এপ্রোন পরে খামারে ঢোকা, কম বয়সী বাচ্চার বেশি যত্ন নেয়া, শেডে জীবাণুনাশক পনি স্প্রে করা, মুরগির বিষ্ঠা ও মৃত মুরগি খামার থেকে দূরে মাটিতে পুঁতে ফেলা, পোলট্রি শেডের ঘরের মেঝে কস্টিক সোডার পানির দ্রবণ দিয়ে ভিজিয়ে পরিষ্কার করা।


পতিত জমিতে নেপিয়ার, বাজরা, খেসারি, গটর, ইপিল ইপিল, গিনি ঘাস লাগানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। কোনো জায়গায় যদি পানি জমে থাকে সে এলাকায় জন্মানো ঘাস গবাদিপশুকে খাওয়ানো যাবে না। কারণ এত গাভী বা গরুর রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বেশি। গরু ও ছাগলকে নিয়মিত গোসল করার ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকলে অসুখ-বিসুখ কম হয়। গোয়াল ঘরের গোবর চনা নিয়মিত পরিষ্কার করা দরকার। আর গরুর গায়ের আটালি, মাছি, জোঁক, পোকামাকড় বেছে দিতে হবে। তড়কা, বাদলা, গলাফুলা রোগ যাতে না হয় সেজন্য উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বা ভেটেরিনারি সার্জনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা বুদ্ধিমানের কাজ।
 

মৎস্যসম্পদ
পুকুরে নতুন মাছ ছাড়ার সময় এখন। মাছ ছাড়ার আগে পুকুরের জলজ আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। পুকুর জীবাণুমুক্ত করে সঠিক সংখ্যক সুস্থ সবল পোনা মজুদ করতে হবে। যেসব পুকুরে মাছ আছে সেসব পুকুরে জাল টেনে মাছের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা দরকার। রোগের আক্রমণ থেকে মাছ রক্ষা করতে স্থানীয় উপজেলা মৎস্য অফিসের সহায়তায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। মৎস্য অফিসের সহায়তায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভাবিত প্রযুক্তি পুকুরে পাঙ্গাশ মাছের চাষ, ধানক্ষেতে মাছ চাষ, প্লাবিত এলাকায় ঘেরের মাধ্যমে রাজপুঁটি ও চিংড়ির চাষ, পুকুরে রুই জাতীয় ও চিংড়ির মিশ্র চাষ এবং প্লাবিত এলাকায় খাঁচায় মাছ চাষ করা যেতে পারে।


বন্যার কারণে ভেসে যাওয়া পুকুরের মাছ পুকুরে রাখতে- ভেসে যাওয়া পুকুরগুলোর ১৫ থেকে ২০ মিটার দূরত্বে একটি চটের ব্যাগে ৫ থেকে ৭ কেজি ধানের কুঁড়া বা গমের ভুসি ৫০ থেকে ৬০ সেন্টিমিটার পানির নিচে একটি খুঁটির সঙ্গে বেঁধে দিতে হবে। তবে ব্যাগটিতে অবশ্যই ছোট ছোট ছিদ্র করে দিতে হবে। এতে খাবার পেয়ে মাছ পুকুরেই অবস্থান করবে।
 

সুপ্রিয় কৃষিজীবী ভাইবোন, বর্ষণসিক্ত শুভ্রতা ছড়ানো স্বচ্ছ প্রকৃতি সবুজ শ্যামলিমার সীমাহীন প্রান্তর, কাশবনের আলোড়ন সবই প্রকৃতির দান। সে সঙ্গে বন্যা, প্লাবন আমাদের নিত্য সহচর। সব কৃষক ভাইয়ের সম্মিলিত প্রচেষ্টা আমাদের কৃষিকে নিয়ে যাবে সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে। সবার জন্য নিশ্চিত সব কৃষি উৎপাদন কামনা করে এ মাসের কৃষি এখানেই শেষ করলাম। সবাই ভালো থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ।

 

কৃষিবিদ মোহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন*
* সহকারী তথ্য অফিসার (শস্য উৎপাদন), কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৫

 


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon